ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নজুড়ে এখন আতঙ্কের নাম ফুয়াদ কাজী (৩৮)। নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিলেও তার নেই কোন পদ। এক সময় বিএনপির ক্যাডার এই ফুয়াদ যুবলীগের পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আত্মসাত, মাছের ঘের দখল, অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও মাদক কারবারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিব্রত তার কর্মকান্ডে। যেকোন সময় কাউকে অপদস্ত ও মারধর করে সম্মানহানী করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অনুঘটক ছিলেন চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের মকবুল হোসেন কাজীর ছেলে ফুয়াদ কাজী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে কিছুটা নিরব থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার মদদে আবারো পুরনো চেহারায় ফিরে যায় ফুয়াদ। মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও তাকে পছন্দ করেন না। নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ অপকর্মের কুশিলব ফুয়াদ। তার ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলে কথাও বলতে চায় না।
অভিযোগ রয়েছে, ৪-৫ মাস পূর্বে সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি লিটন জোমাদ্দারের একটি মাছের ঘের দখল করে ফুয়াদ কাজী। এ সময় ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটানায় নলছিটি থানায় তার নামে একটি মামলাও রয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের মসজিদ বাড়ি এলাকায় এক নারীকে দিয়ে সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রবিন হোসেন রফিককে আটকে অশ্লীল ছবি তোলেন ফুয়াদ কাজী। ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ইউপি সদস্যর একটি পালসার মোটরসাইকেল আটকে রাখেন। নগদ ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনসেট নেন ইউপি সদস্যর কাছ থেকে। নগ্ন ওই ছবি তৈরি করে, তা অন্যদের দেখিয়ে ইউপি সদস্যের সম্মানহানী করে আসছেন। তার এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারা ফুয়াদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের কয়েকজন যুবক জানান, মানুষকে জিম্মি করে, আটকে রেখে, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় তার পেশা। বর্তমানে সে মাদকের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে। কেউ কিছু বললেই তাকে গালাগাল করে। এতে উত্তর দিলে তাকে মারধর করে ফুয়াদ। ফুয়াদের ভয়ংকর আচরণের কারণে তার বিরুদ্ধে কথা বলে না স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা।
ইউপি সদস্য রবিন হোসেন রফিক বলেন, ফুয়াদ কাজী এমন কোন খারাপ কাজ নেই, যা তিনি করেন না। সর্বশেষ আমাকে একটি শালিসির কথা বলে ডেকে নিয়ে একটি ঘরের ভেতরে আটকে এক নারীকে দিয়ে অশ্লীল ছবি ভিডিও করে। ভয় দেখিয়ে আমার পালসার মোটরসাইকেলটি রেখে দেয়। সে আমার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে সই রাখে। আমাকে যথেষ্ট হেয়প্রতিপন্ন করেছে ফুয়াদ। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন রেখে দেয়। বিষয়টি আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোন সুফল পাইনি। কারণ ফুয়াদের ভয়ে কেউ কথা বলে না।
সিদ্ধকাঠি ইউনিয় যুবলীগের সভাপতি লিটন জোমাদ্দার বলেন, ফুয়াদ কাজী বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী ছিল। সে এখন যুবলীগের পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। দলে তাঁর কোন পদ নেই। সে একজন দুষ্টলোক হিসেবেই পরিচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্ধকাঠি ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান জেসমিন কাজী বলেন, সে আমার বাড়ির লোক। আমাদের কাছে অনেক খবরই আসে। কিন্তু আমাদেরও মানিজ্জত রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল হালিম তালুকদার বলেন, আমাদের কাছে একটি ঘটনায় অভিযোগ এসেছিল। এছাড়া বর্তমানে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। আমরা মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। যদি তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যাপারে ফুয়াদ কাজী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়, আপনাদের যা লেখার ল্যাখেন। এতে আমি ভয় পাই না।
Leave a Reply